অ্যালোভেরার অপকারিতা-- অ্যালোভেরার ক্ষতিকর দিক

অ্যালোভেরার অপকারিতা

অ্যালোভেরার অনেক উপকারিতা থাকলেও, কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে।সাধারণভাবে, চুলের জন্য অ্যালোভেরা নিরাপদ এবং উপকারী। তবে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে যদি আপনি সতর্ক থাকেন, তাহলে এর ক্ষতিকর প্রভাব এড়িয়ে চলতে পারবেন।

নিচে অ্যালোভেরার কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা আলোচনা করা হলো:

ত্বকের অ্যালার্জি ও জ্বালাপোড়া

কিছু মানুষের অ্যালোভেরা জেলের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে। এটি ব্যবহার করলে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা লালচে ভাব দেখা দিতে পারে। তাই প্রথমবার ব্যবহারের আগে ত্বকের ছোট একটি অংশে (যেমন হাতের কব্জিতে) লাগিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো।

অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে চুল তৈলাক্ত হওয়া

অ্যালোভেরা জেল চুলের জন্য কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু, তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে বা ঘন ঘন ব্যবহার করলে চুল আরও বেশি তৈলাক্ত ও চিটচিটে হতে পারে। এর ফলে চুল দ্রুত নোংরা হয়ে যায়।

রুক্ষ চুল আরও রুক্ষ হয়ে যাওয়া

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট ধরনের চুলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে চুল আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি তা বিশুদ্ধ অ্যালোভেরা জেল না হয় বা এর সাথে অন্য কোনো ক্ষতিকর উপাদান মেশানো থাকে।

ল্যাটেক্সের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অ্যালোভেরার সবুজ পাতার ঠিক নিচেই একটি হলুদ রঙের তরল পদার্থ থাকে, যাকে ল্যাটেক্স বলা হয়। এই ল্যাটেক্স অনেক সময় পেটে গেলে হজমের সমস্যা, পেট ব্যথা, এমনকি ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। যদিও চুলের যত্নে সাধারণত এই অংশটি ব্যবহার করা হয় না, তবে অসাবধানতাবশত যদি এটি জেলের সাথে মিশে যায়, তাহলে সমস্যা হতে পারে।

চুল রঙ করার ক্ষেত্রে সমস্যা

যারা চুলে রঙ করেন, তাদের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা ব্যবহারের আগে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, কিছু ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেলের প্রভাবে চুলের রঙ দ্রুত হালকা হয়ে যেতে পারে।

সাধারণভাবে, চুলের জন্য অ্যালোভেরা নিরাপদ এবং উপকারী। তবে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে যদি আপনি সতর্ক থাকেন, তাহলে এর ক্ষতিকর প্রভাব এড়িয়ে চলতে পারবেন।

অ্যালোভেরার ক্ষতিকর দিক

 অ্যালোভেরার ক্ষতিকর দিক নিচে দেওয়া হলো:

পেটের সমস্যা

অ্যালোভেরার পাতায় থাকা হলুদ রঙের তরল বা ল্যাটেক্স, যা এলোইন নামে পরিচিত, তা পেটে গেলে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর

গর্ভবতী মহিলাদের অ্যালোভেরা জেল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এর ল্যাটেক্স জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।

কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস

অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালোভেরা ল্যাটেক্স সেবন করলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। তাই কিডনির রোগীদের অ্যালোভেরা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

ওষুধে প্রভাব

অ্যালোভেরা কিছু ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে বা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন, ডায়াবেটিসের ওষুধ, রক্ত পাতলা করার ওষুধ বা ল্যাক্সাটিভ জাতীয় ওষুধের সাথে এটি বিক্রিয়া করতে পারে।

রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া

অ্যালোভেরা জেল রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করা অতিরিক্ত কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

সার্জারির ক্ষেত্রে সমস্যা

কোনো ধরনের সার্জারির আগে অ্যালোভেরা ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি রক্তক্ষরণ বাড়াতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে।

ক্যানসারের ঝুঁকি

অ্যালোভেরার ল্যাটেক্সকে কিছু গবেষণায় কার্সিনোজেনিক বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও এটি এখনো বিতর্কিত। তাই ল্যাটেক্সমুক্ত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা নিরাপদ।

ত্বক সংবেদনশীল হওয়া

সূর্যালোকের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে অ্যালোভেরা। ফলে সূর্যের আলোতে বেরোলে ত্বকে সহজে পোড়া ভাব বা লালচে দাগ দেখা দিতে পারে।

এই ক্ষতিকর দিকগুলো সাধারণত অ্যালোভেরার ল্যাটেক্স অংশটির কারণে হয় অথবা অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহারের ফলে দেখা দেয়। তাই, অ্যালোভেরা ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকা এবং কোনো সমস্যা হলে ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি।

Comments