নিম পাতার চা--নিম পাতার চপ

নিম পাতার চা

আপনি নিম পাতার চা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। নিম পাতার চা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি পানীয়। এর মধ্যে রয়েছে নিমের সব ঔষধি গুণ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, রক্ত পরিষ্কার রাখতে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

নিম পাতার চা তৈরির পদ্ধতি

নিম পাতার চা তৈরি করা খুবই সহজ। নিচে দুটি সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি দেওয়া হলো:

পদ্ধতি ১: তাজা নিম পাতা দিয়ে চা

  • উপকরণ: ৫-৬টি তাজা নিম পাতা, ১ কাপ জল, এবং স্বাদ অনুযায়ী মধু বা লেবুর রস (ঐচ্ছিক)।

  • প্রস্তুত প্রণালী:

    • প্রথমে নিম পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।

    • একটি পাত্রে ১ কাপ জল দিয়ে চুলায় বসান। জল সামান্য গরম হলে পাতাগুলো দিয়ে দিন।

    • জল ফুটে অর্ধেক হয়ে যাওয়া পর্যন্ত মাঝারি আঁচে সেদ্ধ করুন। জল হালকা সবুজ বা হলুদ রং ধারণ করবে।

    • এরপর চুলা বন্ধ করে দিন। জল ছেঁকে কাপে ঢেলে নিন।

    • তেতো স্বাদ কমানোর জন্য এতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস বা এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।

পদ্ধতি ২: শুকনো নিম পাতার গুঁড়ো দিয়ে চা

  • উপকরণ: ১/২ চা চামচ নিম পাতার গুঁড়ো, ১ কাপ গরম জল, এবং মধু বা লেবুর রস (ঐচ্ছিক)।

  • প্রস্তুত প্রণালী:

    • একটি কাপে নিম পাতার গুঁড়ো নিন।

    • এবার এর মধ্যে এক কাপ গরম জল ঢেলে দিন।

    • পাউডারটি জলে ভালো করে মিশিয়ে ২-৩ মিনিট রেখে দিন।

    • এরপর ছেঁকে নিন বা তলানি পড়লে উপরের জল পান করুন।

    • তেতো ভাব কমাতে এতে মধু বা লেবুর রস যোগ করতে পারেন।

নিম পাতার চা পানের উপকারিতা

নিম চা পান করার কিছু প্রধান উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো:

  • রক্ত পরিষ্কার করে: নিয়মিত নিম চা পান করলে এটি রক্তকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে, যার ফলে ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল থাকে।

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য ঔষধি গুণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

  • হজম উন্নত করে: নিম চা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন কৃমি ও গ্যাস থেকে মুক্তি দেয়।

  • ত্বকের সমস্যা দূর করে: এটি ব্রন, ফুসকুড়ি এবং অন্যান্য চর্মরোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: নিম চা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীরা এটি সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

সতর্কতা

  • মাত্রা: প্রতিদিন ১ কাপের বেশি নিম চা পান করা উচিত নয়। অতিরিক্ত সেবনে পেটে ব্যথা বা বমিভাব হতে পারে।

  • সঠিক সময়: সকালের দিকে খালি পেটে পান করা সবচেয়ে ভালো।

  • বিশেষ ক্ষেত্রে: গর্ভবতী নারী, স্তন্যদানকারী মা এবং যারা কোনো বিশেষ রোগে আক্রান্ত, তাদের নিম চা পান করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

নিম চা একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপায় যা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে।

নিম পাতার চপ

আপনি নিম পাতার চপ তৈরির রেসিপি জানতে চেয়েছেন। নিম পাতার চপ একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স, যা নিমের তেতো স্বাদকে কমিয়ে এটিকে মুখরোচক করে তোলে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কারণ এতে নিমের ঔষধি গুণগুলো বজায় থাকে।

নিম পাতার চপ তৈরির রেসিপি

উপকরণ:

  • তাজা নিম পাতা: ১ কাপ (ডাল থেকে ছাড়ানো)

  • ডালের বেসন: ১/২ কাপ

  • চাল বা ময়দার গুঁড়ো: ১/৪ কাপ (চপকে মুচমুচে করার জন্য)

  • পেঁয়াজ কুচি: ১টি (মাঝারি আকারের)

  • কাঁচালঙ্কা কুচি: ২-৩টি (স্বাদ অনুযায়ী)

  • আদা বাটা: ১ চা চামচ

  • ধনে পাতা কুচি: ২ টেবিল চামচ

  • হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ

  • জিরা গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ

  • লবণ: স্বাদ অনুযায়ী

  • জল: পরিমাণমতো

  • তেল: ভাজার জন্য

প্রস্তুত প্রণালী:

১. নিম পাতা প্রস্তুত: প্রথমে নিম পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন। এবার একটি পাত্রে জল গরম করে নিম পাতাগুলো ৫ মিনিট সেদ্ধ করুন। এটি নিমের তেতো ভাব কিছুটা কমিয়ে দেবে। সেদ্ধ করার পর পাতাগুলো ছেঁকে নিন এবং ঠান্ডা করে নিন।

২. চপের মিশ্রণ তৈরি: একটি বড় পাত্রে বেসন, চালের গুঁড়ো, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচালঙ্কা কুচি, আদা বাটা, ধনে পাতা কুচি, হলুদ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো এবং লবণ একসাথে মেশান।

৩. জল যোগ: এবার অল্প অল্প করে জল মিশিয়ে একটি ঘন ব্যাটার তৈরি করুন। ব্যাটারটি এমন হবে যেন তা সহজে চামচ থেকে ঝরে না পড়ে, বরং নিম পাতার গায়ে লেগে থাকে।

৪. নিম পাতা মেশানো: সেদ্ধ করা এবং ঠান্ডা হওয়া নিম পাতাগুলো ব্যাটারের মধ্যে দিয়ে দিন এবং ভালো করে মিশিয়ে নিন।

৫. চপ ভাজা: একটি কড়াই বা প্যানে মাঝারি আঁচে তেল গরম করুন। তেল গরম হলে মিশ্রণ থেকে সামান্য করে নিয়ে গোল বা চ্যাপ্টা আকৃতি দিন এবং সাবধানে গরম তেলে ছেড়ে দিন।

৬. ভাজা: চপগুলো মাঝারি আঁচে সোনালি এবং মুচমুচে হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। একপাশ ভাজা হয়ে গেলে অন্য পাশ উল্টে দিন।

৭. পরিবেশন: চপগুলো ভাজা হয়ে গেলে একটি কিচেন টিস্যুর উপর তুলে রাখুন যাতে অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়। গরম গরম পরিবেশন করুন সস বা চাটনির সাথে।

এই চপটি স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু উভয়ই। এটি নিয়মিত না খাওয়াই ভালো, তবে মাঝে মাঝে একটি নতুন স্বাদের জন্য এটি তৈরি করতে পারেন।

Comments